উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমনকে নাজেহালের দিন বরিশালের আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের ছয় সদস্যকে সেখান
থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এরা
হলেন- এসআই নিরিপেন দাশ, এটিএসআই শচীন ও মাহবুব এবং
কনস্টেবল জাহাঙ্গীর, হানিফ ও সুখেন।
এই
পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশাল মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার নাসিরুদ্দিন।
তিনি
শনিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রশাসনিক কারণে তাদের আদালত থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।”
পঞ্চম
শ্রেণির এক শিশুর আঁকা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্র ছাপানোয় বরিশালের আগৈলঝাড়ার সাবেক ইউএনও গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আওয়ামী লীগের এক নেতা।
বঙ্গবন্ধুর
‘বিকৃত’ ছবি আমন্ত্রণপত্রে ব্যবহারের অভিযোগের ওই মামলায় গত
বুধবার বরিশাল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে আবেদন নাকচ করে তাকে হাজতে পাঠানো হয়। দুই ঘণ্টা পর আবার জামিন
দেন একই বিচারক।
আদালত
প্রাঙ্গনে বর্তমানে বরগুনা সদরের ইউএনও তারিককে পুলিশ ধরে নেওয়ার ছবি প্রকাশ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে বিবৃতি দেয় সরকারি কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
এ
ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে মামলার বাদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বরিশাল জেলা
আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক
বরখাস্ত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
দোষ
দেখছে না পুলিশ সার্ভিস
অ্যাসোসিয়েশন
ইউএনও
তারিক সালমনের সঙ্গে পুলিশের আচরণের সমালোচনা হলেও এই বাহিনীর কর্মকর্তাদের
সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এই কর্মকর্তাকে পুলিশ
গ্রেপ্তার করেনি, হাতকড়াও পরায়নি।
শনিবার
অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা
হয়, “বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ কীভাবে মামলা নিল? পুলিশ মামলা নিল কেন? পুলিশ তাকে কেন গ্রেপ্তার করল? এ বিষয়ে কোনো
থানায়ই মামলা রুজু হয়নি এবং পুলিশ গাজী তারেক সালমনকে গ্রেপ্তারও করেনি।”
বাদীর
আদালতে মামলা দায়ের, ইউএনওর বিরুদ্ধে সমন জারি এবং তার জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “এক্ষেত্রে কোনো পর্যায়েই পুলিশের কোনো ভূমিকা রাখার অবকাশ ছিল না।
“কোন
কোন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে
‘পুলিশ কেন তাকে হাতকড়া পরাল?’, ‘পুলিশ রেগুলেশনের ৩৩০ বিধি অমান্য করা হয়েছে’ শিরোনামে কতিপয় সংবাদ-বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, যা সঠিক নয়।”
আদালতে
জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর ইউএনও তারিকের
সঙ্গে পুলিশের আচরণের নিন্দা জানিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়, “আদালতের আদেশে অভিযুক্ত হিসেবে জেল হাজতে নেওয়ার সময় কর্তব্যরত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তার উপর বল প্রয়োগ করে
এবং বেআইনিভাবে (পুলিশ রেগুলেশন এর ৩৩০ ধারা
অমান্যপূর্বক) টেনে-হিঁচড়ে কোর্ট হাজতে নিয়ে যায়।”
রাষ্ট্রের
একজন ‘গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা’ এবং উপজেলা পর্যায়ে প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধির বিরুদ্ধে এই আচরণকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
ও মানহানিকর’ আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ
করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন।
তবে
পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, “পুলিশ গাজী তারেক সালমনকে কোনো হাতকড়া পরায়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ভালোভাবে পর্যালোচনা করলে বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে প্রতীয়মাণ হবে।
“এছাড়া
ইউএনও গাজী তারেক সালমনের উপর বল প্রয়োগ করে
টেনে-হিচঁড়ে কোর্ট হাজতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে, যা তথ্য নির্ভর
নয়।”
ইউএনও
তারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে এজন্য তার ভোগান্তির নিন্দা জানিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
Comments
Post a Comment