কক্সবাজারে পাহাড়ধসে চারজনের মৃত্যু


কক্সবাজারে দুটি পাহাড়ধসের ঘটনায় দুই শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও চারজন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে দেড়টার মধ্যে পাহাড়ধসে হতাহত হওয়ার এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল রাত সোয়া ১২টার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার লাইটহাউস পাহাড় ধসে একতলা একটি ভবনের দেয়ালের ওপর পড়ে দুই তরুণের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের ধামনখালী গ্রামের সাদ্দাম হোসেন (২৪) ও চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের মামুনপাড়ার মো. শাহেদ (১৬)। এ সময় আহত হয়েছে নিহত সাদ্দামের ছোট ভাই আরাফাত উদ্দিন (১৬) ও রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের গোয়ালিয়াপালং গ্রামের দেলোয়ার হোসেন (১৭)। ওই চারজন ১০০ ফুট উঁচু লাইটহাউস পাহাড়ের খাদে তৈরি একতলা ভবনের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতেন। চারজনই কক্সবাজার সৈকতের হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালের কর্মচারী। পাকা বাড়িটির মালিক পিএমখালী এলাকার জনৈক মমতাজ উদ্দিন।
স্থানীয় যুবক নাফিজ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, রাত সোয়া ১২টার দিকে পাহাড়ের একাংশ ধসে ওই পাকা ভবনের এক পাশে পড়ে। এ সময় চার হোটেল কর্মচারী মাটিচাপা পড়েন। তিনিসহ স্থানীয় ১২-১৩ জন যুবক ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি সরিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন এবং দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সাদ্দাম ও মো. শাহেদকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই শাহেদের মৃত্যু হয়েছে। আর হাসপাতালে আসার ১০ মিনিট পর মারা গেছেন সাদ্দাম হোসেন। আহত দেলোয়ার হোসেন ও আরাফাত উদ্দিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, উঁচু লাইটহাউস পাহাড় কেটে একতলা পাকা ভবনটি তৈরি হয়েছিল। এই ভবনে চারটি কক্ষে মাসিক তিন হাজার টাকা ভাড়ায় থাকত চারটি পরিবার। এর মধ্যে পাহাড়ের পাশের কক্ষটিতে থাকত হতাহত হওয়া চার হোটেল কর্মচারী।
ঘটনাস্থলে কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পঙ্কজ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়ধসে বাড়িটির দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। চার দিন আগেও এই লাইটহাউস পাহাড়সহ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে আট শতাধিক লোককে সরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা আবার পাহাড়ে বসতি শুরু করেছেন।

এ ছাড়া গতকাল রাত দেড়টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের চেইন্দা এলাকার (রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন) কাইম্যারঘোনা পাহাড় ধসে এক পরিবারের দুই শিশু মারা গেছে। তারা হলো মো. রায়হান (৫) ও সায়মা আকতার (৩)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নিহত শিশুদের বাবা জিয়াউর রহমান (৩৮) ও মা আনারকলী (৩০)।

স্থানীয় দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভুট্টো বলেন, রাত দেড়টার দিকে বিকট শব্দে পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে সৌদিপ্রবাসী জিয়াউর রহমানের টিনশেড বাড়িতে। এ সময় জিয়াউর রহমানের পরিবার ঘুমিয়ে ছিল। পরে দমকল বাহিনী ও স্থানীয় লোকজন মাটি সরিয়ে দুই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করেন। তাদের মা-বাবাকে কক্সবাজারের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) তাহমিনুর রহমান ঘটনাস্থল থেকে প্রথম আলোকে বলেন, মাটিচাপাতেই জিয়াউর রহমানের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার দমকল বাহিনীর সহকারী উপপরিচালক আবদুল মালেক বলেন, পাহাড়ধসের খবর পেয়ে তাঁরা গভীর রাতে চেইন্দা এলাকায় পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালান। এ সময় মাটি সরিয়ে দুই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম মজুমদার পৃথক দুটি পাহাড়ধসের ঘটনায় চারজনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে শহরের বিভিন্ন পাহাড়ে ধসের ঘটনা ঘটছে। এসব পাহাড় থেকে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে আনার কাজ চলছে।

Comments