বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় নতুন চার হাজার বাস নামানোর বিষয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা সায় দিয়েছেন। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, নতুন ব্যবস্থা চালু হলে বাসে উঠতে মারামারি, টানাটানি, ধাক্কাধাক্কি থাকবে না। বিদ্যমান পরিবহন মালিকেরাও বঞ্চিত হবেন না।
গতকাল সোমবার মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে ঢাকা সড়ক পরিবহন
সমিতি আয়োজিত বিশেষ সাধারণ সভায় এসব আলোচনা হয়। সমিতির সাধারণ সম্পাদক
খোন্দকার এনায়েত উল্যাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন
ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক। উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় চলাচলকারী বাসের
মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র বলেন, ঢাকায় বর্তমানে পাঁচ থেকে ছয়
হাজার বাস চলাচল করে। মালিক আছেন প্রায় দুই হাজার। প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে
রাস্তায় পাল্টাপাল্টি চলে হরদম। ফলে বাস দ্রুতই লক্কড়ঝক্কড়, রংচটা হয়ে পড়ে।
তিনি এর অবসান চান। এ জন্যই দুই বছর আগে নতুন বাস নামানোর পরিকল্পনা করেন।
এরপর সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের সঙ্গে ২৫-২৬টি বৈঠক করেছেন। তিনি বলেন,
‘কাল বা পরশুই হয়তো নতুন বাস নেমে যাবে না। তবে যত দ্রুত নামানো যায়, সেই
কাজে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা-শ্রম নিয়োগ করব।’
সরকার ঢাকার পরিবহন-ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০০৪ সালে ২০ বছর
মেয়াদি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) তৈরি করে। এর আলোকে বিভিন্ন
উড়ালসড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ও চলমান আছে। মেট্রোরেল প্রকল্প চলমান। ওই
পরিকল্পনাতেই গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বিশেষ বাসসেবা চালুর কথা বলা হয়।
আনিসুল হক ডিএনসিসির মেয়র হওয়ার পর একটি বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে এর একটি
পরিকল্পনা তৈরি করেন।
সিটি করপোরেশন সূত্র বলেছে, এই ব্যবস্থা বাস্তবায়নের
লক্ষ্যে কিছু সুপারিশ করেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হচ্ছে পুরো ঢাকার বাসব্যবস্থা
পাঁচ-ছয়টি কোম্পানির অধীনে নিয়ে আসতে হবে। এতে প্রত্যেক মালিক তাঁর
বিনিয়োগের হার অনুসারে লভ্যাংশ পাবেন। আর প্রতি কোম্পানির বাসের রং হবে
আলাদা। একটার পর একটা বাস সময় মেনে চলবে। পথে কেউ কারও আগে যাওয়ার চেষ্টা
করবে না। পাঁচ বছরের পুরোনো বাস তুলে দিতে হবে। এর কম পুরোনো বাস মেরামত
করে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়ে আসতে হবে।
এই পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করতে মেয়র ও পরিবহননেতারা
অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সর্বশেষ গত মে
মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
অবশ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ
খোকন ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের এক সভায় এই পরিকল্পনা সম্পর্কে তাঁকে
জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন।
গতকাল ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছেন। যাঁকে
প্রয়োজন হবে, তাঁকেই সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সভায় ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার
এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের পরিকল্পনা
বাস্তবায়নে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা একমত। এ সময় তিনি একমত কি না তা হাত
উঠিয়ে দেখাতে বললে উপস্থিত মালিক-শ্রমিকেরা হাত উঠিয়ে দেখান। তিনি বলেন, এই
পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি রেখে বাসে চড়বে। তবে কিছু
দাবির কথাও বলেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ হারে বাস কেনার জন্য
ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা, পুরোনো বাসগুলো সরকারের পক্ষ থেকে কিনে নেওয়া,
ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা এবং ঢাকায় পাঁচটি বাস ডিপো নির্মাণ করা।
জবাবে মেয়র আনিসুল হক বলেন, সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে আজ পর্যন্ত
ঋণ দেওয়ার নজির নেই। তবে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। বর্তমানে পরিবহন
মালিকেরা ২৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদে বাস কিনছেন। রাজধানীতে বাস ডিপো করার জন্যও
জায়গা চিহ্নিত করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব পথে বাস চলছে,
এর সব পথেই বাস থাকবে। মালিকেরাও সবাই বিনিয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু
ব্যবস্থাপনা হবে ভিন্ন। ইলেকট্রনিক টিকিট-ব্যবস্থা চালু করা হবে। নারীদের
জন্য বিশেষ সেবা রাখা হবে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসও চালু করা হবে। সড়ক যেখানে
চওড়া বা পাশে জায়গা রয়েছে, সেখানে বাসের জন্য বিশেষ লেনেরও ব্যবস্থা করা
হতে পারে।
সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ
সম্পাদক ওসমান আলী, মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল
কালামসহ পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
Comments
Post a Comment