শৈশব
থেকেই শিখেছি মানুষকে মনুষ্যত্বের বিচারে সম্মান করতে, ধর্ম, কুল, গোত্র বা গাত্রবর্ণের বিচারে নয়।
ছোটবেলায়
যখন নতুন কারো সাথে আমার পরিচয় হতো, তখন সেই অপরিচিত ব্যক্তি আমার নাম শুনে প্রশ্ন করতেন আমি হিন্দু না মুসলমান? জবাবে
আমি বলতাম, হিন্দু-মুসলমান জানি না, কিন্তু এটা জানি যে আমি একজন
মানুষ। আমার ছোটো মুখে এমন উওর শুনে অপরিচিত ব্যক্তি হা হা করে
হেসে উঠতেন।
এখন
বড় হয়েছি তবু সেই একই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আজও। তবে
যারা এ ধরনের প্রশ্ন
করেন, আমার কাছে তাদের বড় মানুষ বা
বুদ্ধিমান মানুষ মনে হয় না। কারণ
কোনো মানুষই হিন্দু বা মুসলমান হয়ে
এই পৃথিবীতে আসে না। প্রত্যেকেই পৃথিবীতে আসে মনুষ্যত্বের ধর্ম নিয়ে। তাই জন্মসূত্রে একজন মানুষ হিন্দু, মুসলমান বা বৌদ্ধ কিংবা
খ্রিষ্টান যাই হোক, সেটা আমার কাছে বড় ব্যাপার নয়।
মানুষের পরিচয় তার মানবিক আচরণে। তার মনুষ্যত্বে। কিন্তু দু:খের ব্যাপার
হলো, আমরা ছোটরাও যে ব্যাপারগুলো বুঝতে
পারি, বড়রা তা বুঝতে পারেন
না। এর ফলেই আজ
আমাদের সমাজের এই ভেদাভেদ। এই
অপরাধ প্রবণতা। এই লড়াই। এই
সহিংস আচরণ।
পারিবারিকভাবেই
নিজ ধর্মের পাশপাশি, অন্য সব ধর্মের প্রতিই
আমার জানার আগ্রহ ছিলো। পরিবার থেকেও এসব জানার বা বোঝার ব্যাপারে
আমাকে বইপত্র কিনে সাহায্য করেছেন আমার অভিভাবক।
আমার
অন্য ধর্মের বন্ধুদের উৎসবে যেতে আমার কোনো বাধা নাই বরং আগ্রহ আছে। তবে সামাজিকভাবে অনেক কথা শুনতে হয়। সাম্প্রদায়িকতার বীজ পুঁতে দেওয়া হয় আমরা না
চাইলেও। তখন মানুষের চিন্তার এই সীমাবদ্ধতা আমাকে
কষ্ট দিত তবে এখন আমি বুঝতে শিখেছি আমি কীভাবে আমাকে গড়ে তুলব। এবং এটাও বুঝেছি যে বড়রা খুব
অবুঝ!
বরাবরই
একটা গান আমার খুব প্রিয় ছিল। সেটা হলো- ‘‘বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিষ্টান, বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি।’’
তখন
থেকেই গানের কথাগুলো আমাকে খুব বেশি প্রভাবিত করত। আর তাই সব
ধর্মের মানুষকে ভালোবেসেছি বলে, অন্যের ধর্মকে অসম্মান বা অশ্রদ্ধা করিনি।
তাই বড়দের বলতে না পারলেও আমার
বয়সী বন্ধুদের বলি, ধর্মের বিচারে নয় মানুষকে সম্মান
করুন মানুষ হিসেবে।
Comments
Post a Comment