২০১৭
সালের হজ কার্যক্রম উদ্বোধন
করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় ইসলাম
ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে।
শনিবার
রাজধানীর আশকোনায় হজ ক্যাম্পে আনুষ্ঠানিকভাবে
হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি।
এবার
বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭
হাজার ১৯৮ জন হজ করতে
যাচ্ছেন। সোমবার সকালে ৪১৮ জনের জেদ্দার উদ্দেশে রওনা হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবছরের হজযাত্রা।
ইসলামের
প্রসারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা তার সাড়ে তিন বছরের সরকারের সময়ে হজ ব্যবস্থাপনা উন্নত
করতে বহু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কম খরচে হজ
পালনের জন্য তিনি হিজবুল বাহার জাহাজ ক্রয় করেন এবং বাংলাদেশ থেকে প্রথম হজযাত্রী প্রেরণ করেন।
“তিনিই
প্রথম আইন করে মদ নিষিদ্ধ করেন,
ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ
করেন, বেতার ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠানের
শুরু ও সমাপ্তিতে কুরআন
তিলাওয়াতের প্রচলন করেন।”
“একজন
খাঁটি মুসলমান হিসেবে জাতির পিতা ইসলামের কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন,” বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
নিজের
সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাতে মূল ধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। জীবনে চাকরি ও ভালো কাজের
সুযোগ পায়; সেই সুযোগটা আমরা তাদের জন্য সৃষ্টি করে দিয়েছি।”
মসজিদভিত্তিক
শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রত্যেক উপজেলা ও জেলায় মডেল
মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক
কেন্দ্র স্থাপন করব। যেখানে প্রকৃত ইসলামের ধারণাটা মানুষে পেতে পারে।”
১৯৮৪
সালে প্রথম ওমরাহ এবং ১৯৮৫ সাল থেকে বহু বার হজ পালন করার
কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেহেতু পিতা-মাতা সবাইকেই হারিয়েছি, তাই তাদের জন্য আমাকে বার বার বদলি হজ করতে হয়েছে।”
হজ
পালনের অভিজ্ঞতা থেকে হজযাত্রীদের নানা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
“তাঁবুগুলোতে
ঘুরতাম। যা যা সমস্যা
দেখতাম, এসে সৌদি বাদশার কাছে চিঠি লিখতাম। আমি সরকারে ছিলাম না, তারপরও আমি চেষ্টা করতাম।”
হাজিদের
সুবিধায় হজ উইংয়ের অফিস
জেদ্দা হতে মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনে স্থানান্তরের
কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমরা
সব অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা দূর করে হজযাত্রীদের জন্য উন্নতমানের আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আগামীতেও হজ ব্যবস্থাপনায় সফলতার
ধারা অব্যাহত থাকবে।”
অতীতে
হাজীদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে
ধরতে গিয়ে দূরবর্তী, পুরনো ও পাহাড়ের উপর
বাড়ি ভাড়া করার কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশের
ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়টি তুলে ধরে তাদের নিরাপদে ফেরার আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
হাজযাত্রীদের
উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা পবিত্র মাটিতে যাচ্ছেন হজ পালনের উদ্দেশ্যে।
আপনারা দেশের জন্য দোয়া করবেন।”
ইসলামের
নামে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে মানুষ হত্যার দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, “ধর্মের না নিয়ে অহেতুক
নিরীহ মানুষকে হত্যা করা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা; এই ধরনের কর্মকাণ্ড
যেন না হয়।
“কারণ,
এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে নিরীহ মুসলমানদের নানা জায়গায় হয়রানির শিকার হতে হয়, হেনস্তা হতে হয়, এমনকি জীবনও দিতে হয়। কয়েকটা ভ্রান্ত লোকের কারণে আজকে গোটা মুসলিম উম্মাহ বিপদের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।”
তিনি
বলেন, “আমরা আমাদের দেশে কোনোমতে সন্ত্রাস হতে দেব না। আর আত্মঘাতি হওয়া,
এটা ইসলাম কখনও সমর্থন করে না।”
বাংলাদেশে
যেন সব ধর্মের মানুষ
শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান করে যেতে পাওে, সেজন্যও দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি
বলেন, “যারা ধর্মের নামে বিভ্রান্তির পথে যাচ্ছে আল্লাহ যাতে তাদের সুপথে ফিরিয়ে আনেন।”
হজযাত্রীদের
আবগারি শুল্ক (বিমান ভাড়ায়) এক হাজার টাকা
মওকুফ করে দেওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি
বলেন, “এই বাজেটে এক্সাইজ
ডিউটি যেটা আগে একহাজার টাকা ছিল, সেটাকে দুই হাজার টাকা করা হয়েছে। যেহেতু এবার হজ প্যাকেজ আগেই
ঘোষণা করা হয়েছে, আপনারা হাজিরা আগেই টাকা জমা দিয়েছেন। সেজন্য অতিরিক্ত টাকা যাতে এবার না দিতে হয়
সেজন্য আমি নির্দেশ দিয়েছি। অর্থমন্ত্রীকে বলব।”
“মাত্র
এক হাজার টাকা দিতে কারও কোনো অসুবিধা নেই। তারপরও এবার যেহেতু সব ব্যবস্থাপনা হয়ে
গেছে, এই সুযোগ নিয়ে
অনেকে ঝামেলা করতে পারে। যাতে ঝামেলা করতে না পারে সেজন্য
এটা যাতে অব্যাহতি দেওয়া হয় সেজন্য ব্যবস্থা
আমরা করে দিয়েছি।”
২০১০
সালে জাতীয় হজ নীতিকে আরও
যুগোপযোগী ও তথ্য-প্রযুক্তি
নির্ভর করে ‘জাতীয় হজ ও ওমরাহ
নীতি’ প্রণয়নের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি
বলেন, হজ বিষয়ক ওয়েব
পোর্টাল
www.hajj.gov.bd এ সব তথ্য পাওয়া
যাচ্ছে। হজ নিয়ে মোবাইল
অ্যাপ চালু করা হয়েছে। মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমেও প্রত্যাশিত তথ্য পাচ্ছেন।
Comments
Post a Comment