চিকিৎসার
জন্য হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমেদ শফীর ভারতে যাওয়ার সমালোচনা করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
শনিবার
এক আলোচনা সভায় বিএনপিপন্থি এই পেশাজীবী নেতা
বলেন, “বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের ভারত সম্পর্কে সাবধান হতে হবে। আমার প্রতিবেশী রাষ্ট্র এদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান অন্তরায়।
“দুর্ভাগ্যবশত,
যারা খোদাতে বেশি বিশ্বাস করেন, আমাদের খোদার পথে নিয়ে যেতে চান, সেই আল্লামা শফীও খোদার উপর আস্থা না রেখে ভারতীয়
হাসপাতালের ওপর আস্থা রেখে ভারতে রওনা হয়ে গেছেন। আমাদের সমস্যা হলো এখানে।”
৯৫
বছর বয়সী শফী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে চট্টগ্রামে ফেরার ১২ দিন পর
শনিবার দিল্লি রওনা হন।
এসব
বাদ দিয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম মইনুল ইসলামের মহাপরিচালক শফীকে ‘আল্লাহর’ উপর ভরসা করার পরামর্শ দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ।
“আমি
তাকে বলব- খোদার প্রতি আস্থা রাখেন, উনি যদি না বাঁচায় ভারতীয়
হাসপাতাল কি আপনাকে বাঁচাতে
পারবে?”
শারীরিক
দুর্বলতা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা
নিয়ে গত ১৮ মে
থেকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আহমদ শফী।
প্রায়
১৫ দিন সেখানে চিকিৎসার পর পরিস্থিতির উন্নতি
না হওয়ায় গত ৬ জুন
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে আনা হয়েছিল ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা শেষে গত ১০ জুলাই
চট্টগ্রাম ফিরেছিলেন তিনি।
হেফাজতে
ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী, ফাইল ছবি
চিকিৎসার
জন্য রাজনীতিকদের বিদেশে যাওয়ার সমালোচনা করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, “হামিদ সাহেবও (রাষ্ট্রপতি) একটু শ্বাসকষ্ট হলে ছোটেন, প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) কানে না শুনলে ছোটেন,
বিরোধী দলের নেত্রী (খালেদা জিয়া) চোখে কম দেখলে ছোটেন।
কতদিন আমরা বিদেশি ভরসায় থাকব?”
রাষ্ট্রপতি
আবদুল হামিদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেলেও বিভিন্ন সময় বক্তব্যে চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে অনীহার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাফরুল্লাহ
চৌধুরীর মতে, রাজনীতির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিদেশিদের ‘ভরসায় থাকেন’।
তিনি
বলেন, “দেখবেন, রাজনীতির ক্ষেত্রে আমরা সব সময় অন্যের
ভরসায় থাকতে চাই। আমি বলতে চাই, এগুলো বাদ দিতে হবে। শক্তি জনগণ, আপনারা। বিরোধী দলকে ভারত সম্পর্কে তাদের মনোভাব পরিষ্কার করতে হবে।”
কাশ্মিরের
মুসলমানদের প্রতি ভারত সরকারের আচরণের কঠোর সমালোচনা করেন ডা. জাফরুল্লাহ।
নির্বাচনকালীন
‘সহায়ক সরকারের’ দাবি আদায়ে আন্দোলনের জন্য বিএনপিকে পাকিস্তান আমলের যুক্তফ্রন্টের মতো সম্মিলিত বিরোধী দলীয় ঐক্য গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।
“পরিবর্তনের
জন্য অবশ্যই জোরদার আন্দোলনের দরকার হয়। সেজন্য দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, ভালো সরকারের স্বার্থে গড়ে তুলতে হবে সম্মিলিত বিরোধী দলীয় ঐক্য। উনারা বিএনপির রূপকল্পে হাদিস তৈরি করেছেন। আপনারা কজন সেটা পড়েছেন জানি না। আমি এক রাতে চারবার
পড়েছি। কোনো কিছুই পরিষ্কার করে বলা নেই। কমিউনিস্টদের মতো উনারা আলোচনা করতে চান না। রূপকল্প করার আগে আলোচনা করলে কী হত?”
বিএনপিকে
‘মুক্তিযুদ্ধের দল’ অভিহিত করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি
বলেন, “বিএনপি নিশ্চয়ই চায়, যারা মানবতাবিরোধী তাদের বিচার হবে। তাহলে পরিষ্কারভাবে বলতে পারতেন, যদি কেউ থাকে তো বিচার অব্যাহত
থাকবে, সুষ্ঠু বিচার হবে।
“কাদের
মোল্লার বিচারের মতো না। আমি এই ব্যাপারে লুকোচুরি
করি না। আমি এখনও বিশ্বাস করি, কাদের মোল্লার উপর বোধ হয় অন্যায় হয়ে
গেছে।
“তিনি
সিপিবি করতেন। আমাদের বঙ্গবন্ধু আমলে সেই সময়ে হলের নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলেন,
সেখানে চার বছর অবস্থান করেছেন। সেই কসাই কাদের, সে কীভাবে চার
বছর অবস্থান করে? সেজন্য আমার সন্দেহ হয়।”
জাতীয়
প্রেস ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে ‘জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম ৭১’ এর উদ্যোগে এই
আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ।
Comments
Post a Comment